ওয়াশিংটন ডি.সি. থেকে: বাসে করে নিউইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনের পথে শুক্রবার সন্ধ্যায় পাশের যাত্রীটি ছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, সামান্থা। বললেন, আমি এখনো আনডিসাইডেড।
বিষয়টি বিশ্লেষণে সত্যিই দেখা গেলো নির্বাচনী জরিপের চড়াই-উতরাই চলছে। একেক মিডিয়ার একেক রকম জরিপ ফলাফল।
শুক্রবার ওয়াশিংটন পোস্ট-এবিসির প্রকাশিত জরিপের ফলাফলে দেখানো হয়, হিলারি ক্লিনটন ৪ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন। এই জরিপ মতে, হিলারি ৪৮ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪৪ শতাংশ ভোট পাচ্ছেন। অথচ একদিন আগেই অপর একটি জরিপ দেখাচ্ছিলো, হিলারি এগিয়ে ১৪ পয়েন্টে। এক দিনেই ১০ পয়েন্ট গায়েব!
এদিকে একই দিনে লস এঞ্জেলস টাইমস দেখাচ্ছে, জরিপে ট্রাম্প ৪৬.২ পয়েন্ট নিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসাবের জয়ের পথে এগিয়ে। এই জরিপে হিলারি ৪৩ পয়েন্ট নিয়ে প্রায় ৩ পয়েন্ট পিছিয়ে। সংবাদমাধ্যমটি এও দেখিয়েছে, পুরো অক্টোবরজুড়ে তাদের জরিপে এই ব্যবধান ৭ পয়েন্টও ছাড়িয়ে গেছে। গত ১৯ অক্টোবর তৃতীয় বিতর্কের দিনেও ব্যবধান ছিলো প্রায় ৫ পয়েন্ট। তবে ২৩ অক্টোবর পত্রিকাটি ট্রাম্পকে ২ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকতে দেখায়।
আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে, রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার বলেছেন, আজই যদি ভোট হয় তিনি তাতে প্রস্তুত। কারণ তিনি জানেন এই নির্বাচনে তারই জয় হবে। আরেক বক্তৃতায় তো আরও একটু এগিয়ে বলেছেন, হিলারি এই নির্বাচনের জন্য মোটেই যোগ্য নয়, তাই ভোট না করে তার হাতেই প্রেসিডেন্সি তুলে দেওয়া হোক।
অন্যান্য জরিপের দিকে একটু নজর দেওয়া যাক। এপি-জিএফকে জরিপ দেখাচ্ছে, হিলারি ক্লিনটন ১৪ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে। এই জরিপে হিলারি পাচ্ছেন ৫১ শতাংশের সমর্থন আর ট্রাম্প পাচ্ছেন ৩৭ শতাংশের সমর্থন।
ফক্স নিউজের জরিপ দেখছে, এই ব্যবধান মাত্র ৩ পয়েন্টের। এদের জরিপে হিলারি ৪৪ শতাংশ ও ট্রাম্প ৪১ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছেন।
হাফিংটন পোস্টের জরিপে হিলারি এগিয়ে রয়েছেন ৭ পয়েন্টে। এতে হিলারির পক্ষে ৪৬.৬ শতাংশ ও ট্রাম্পের ৩৯ শতাংশ সমর্থনের তথ্য মিলছে।
আইবিডি-টিআইপিপির জরিপেও হিলারি এগিয়ে, তবে তা পুরো ১ পয়েন্টও নয়। এই জরিপে ট্রাম্প ৪১.২ শতাংশ আর হিলারি ৪১.৮ শতাংশ ভোট পাচ্ছেন।
এসব জরিপের মধ্যে যেমন ব্যবধানের ফারাক অনেক বেশি, তেমনি এতে মার্জিন অব এররেও নেই ভারসাম্য। যেমন ফক্স নিউজ মার্জিন অব এরর ধরে ২.৫ শতাংশ। আর তা যদি দুই প্রার্থীর ক্ষেত্রে ধরা হয়, তাতে ব্যবধানটি বেড়ে দাঁড়ায় ৫ শতাংশ। এপি-জিএফকের ক্ষেত্রে এই মার্জিন অব এরর আরেকটু বেশি।
এখানে কবে জরিপ চালানো হয়েছে সেটিও এই বড় ফারাকের কারণ হতে পারে। যেমন এপি-জিএফকে তাদের জরিপ চালিয়েছে ২০ থেকে ২৪ অক্টোবর। শেষ বিতর্ক আয়োজনের ঠিক পরের দিন থেকেই জরিপ শুরু হয়। ফলে বিতর্কে তার ভালো ফলের একটা প্রভাব এতে ছিলো সে কথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
আর ফক্স তার জরিপটি চালিয়েছে ২২ থেকে ২৫ অক্টোবর। এই জরিপ যখন শুরু হয় ততদিনে হিলারি বিতর্কে কী করেছেন, তা অনেকের মন থেকেই মুছে যেতে শুরু করেছে।
আর তাছাড়া এপি-জেএফকের জরিপ চালানো হয়েছ অনলাইনে। ফক্স জরিপ করেছে সরাসরি টেলিফোন করে। প্রতিটি জরিপ প্রতিষ্ঠানই তাদের নিজের প্রক্রিয়ায় কাজটি সম্পন্ন করে।
জরিপগুলোর আবার দু’টি দিক রয়েছে। একটি টু ওয়ে রেস, অপরটি ফোর ওয়ে রেস। টু ওয়ে রেসের ক্ষেত্রে মোট ৩৬টি জরিপের সবগুলোতেই হিলারি ক্লিনটন জয়ী হচ্ছেন। আর ফোর ওয়ে রেসের ৫২টি জরিপের ৪৮টিতে হিলারি এগিয়ে। হাফিংটন পোস্ট তার নির্বাচনী পূর্বাভাস থেকে বলছে, এই নির্বাচনে হিলারি ক্লিনটনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা ৯৭.৫ শতাংশ। সংবাদমাধ্যমটি মাত্র ২.৫ শতাংশ সম্ভাবনা রাখছে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৬
এইচএ/এমএমকে
আরও পড়ুন
*** নির্বাচনী সহিংসতার শঙ্কা প্রকট হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে
** আর্লি ভোটে আর্লি তুষারপাত, মূল ভোটে কি হবে!
** মুসলিম ডেমোক্র্যাটরা সক্রিয়, রয়েছেন বাংলাদেশিরাও
***বোস্টনে ভোট ক্যাম্পেইনের এক উপভোগ্য সন্ধ্যা
*** বোস্টনে মিললো ভোটের বিলবোর্ড
*** হিলারির জন্য প্রচারে আমেরিকান মুসলিমদের র্যালি রোববার
*** জ্যাকসন হাইটসের আড্ডায় ট্রাম্প আতঙ্ক
***বহু জাতির দেশে বহুমুখী ভোট, বহু তার সমীকরণ
*** আবহাওয়া ঠাণ্ডা, ভোটের হাওয়া কী গরম!
***অদ্ভুত এক নির্বাচনের দেশে!
***প্রেসিডেন্ট নির্বাচন কাভার করতে বাংলানিউজ’র মেনন যুক্তরাষ্ট্রে